নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার একদিন পর, ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ও তার নেপথ্যের করুণ চিত্র। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে এফ-৭ বিজিআই মডেলের একটি যুদ্ধবিমান আচমকা আছড়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি দুইতলা শ্রেণিকক্ষ ভবনের ওপর।
দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৫ জন। অনেকেই এখনও নিখোঁজ, আর অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে খুঁজে ফিরছেন প্রিয় সন্তানদের।
শিক্ষক যা বললেন ঘটনাস্থল নিয়ে
মাইলস্টোন স্কুলের প্রভাষক মো. রেজাউল হক মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, বিধ্বস্ত হওয়া ভবনটি ছিল তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত। এখানে মোট ১২টি শ্রেণিকক্ষ ছিল এবং প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২২০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করত।
তিনি বলেন, “ঘটনার সময় টিফিন বিরতি চলছিল। অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই বের হয়ে গিয়েছিল। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তখনও শ্রেণিকক্ষে বা ভবনের আশেপাশেই অবস্থান করছিল। বিশেষ করে নিচতলার শ্রেণিকক্ষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে নিচতলায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছেন।”
বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেমেছে শোকের ছায়া
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দুর্ঘটনাস্থলে ভিড় করেন অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে, যাতে কেউ দুর্ঘটনাস্থলে না যেতে পারে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিমানবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল আলামত সংগ্রহের কাজ চালায়।
ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে উদ্ধার করা বই-খাতা, পোড়া ইউনিফর্ম ও ব্যাগ দেখে অনেকেই কাঁদতে কাঁদতে অচেনা শব্দে প্রিয়জনকে ডাকতে থাকেন।
বিভিন্ন হাসপাতালে বিভক্ত আহত ও নিহত শিক্ষার্থীরা
সামরিক ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা চলছে। আইএসপিআরের দেওয়া তথ্যমতে:
বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত ৪৬, নিহত ১০
ঢাকা সিএমএইচ: আহত ২৮, নিহত ১৬
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: আহত ৬০, নিহত ১
লুবনা জেনারেল হাসপাতাল: আহত ১৩, নিহত ২
ঢাকা মেডিকেল: আহত ৩, নিহত ১
ইউনাইটেড হাসপাতাল: আহত ২, নিহত ১
অন্যান্য হাসপাতালে: আহত ১৩, নিহত ১
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বহু শিক্ষার্থীর শরীরের বড় একটি অংশ পুড়ে গেছে। কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
নিখোঁজদের সন্ধানে উৎকণ্ঠা
নিখোঁজ থাকা শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা এখনো বিভিন্ন হাসপাতাল ও মরদেহ শনাক্তকরণ কেন্দ্রে ছুটছেন। কেউ কারো নাম তালিকায় পাচ্ছেন না, কেউবা মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না—এটাই তাদের সন্তান কি না।
স্কুলের এক নারী শিক্ষক বলেন, “প্রতিটি ক্লাসে চেনা মুখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে যে আর ফিরবে না, সেটা মনে হলেই বুক ফেটে কান্না আসে।”
তদন্ত ও জবাবদিহির দাবি
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকাজুড়ে বিমান চলাচলের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ দ্রুত একটি নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন।
মাইলস্টোন কলেজের এই দুর্ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি জাতিগত বেদনার নাম, একটি অজস্র ভবিষ্যৎ হারিয়ে যাওয়ার গল্প। শিক্ষকরা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেননি—আগামীকাল ক্লাসে কারা কারা থাকবে না। অভিভাবকরা জানেন না—তাদের সন্তান ফিরে আসবে কি না।
এ মুহূর্তে উত্তরার আকাশে কেবল একটাই প্রার্থনা—আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন এমন অন্ধকার না নামে।
রবিউল ইসলাম/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
মাইলস্টোন কলেজ বিমান দুর্ঘটনা: শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রকাশ করলেন শিক্ষক
- আপলোড সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০১:৫৭:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০১:৫৭:০৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ